অর্থপূর্ণ নামায

অর্থপূর্ণ নামায (সালাত) শব্দসহ

সমস্তপ্রশংসা আল্লাহর যে, তিনি আমাদের মুসলমান হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেনে এবং আমাদের তার ইবাদত করার মত তৌফিক দিয়েছেন। আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করি আমারা যদি আমরাদের সলাতকে আরো সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করতে চাই তাহলে আমরা আমাদের সলাতে আরবিতে কি বলছি তা জানা দরকার কারন এতে করে আমাদের একনিষ্ঠতা বেড়ে যাবে। চলুন আমরা সলাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত দোয়া পড়ি সব গুলোর বাংলা অর্থ জেনে নেই ।


তাকবীরে তাহরীমা

আল্লাহুআকবার – আল্লাহ সবচেয়ে বড়

সানা পড়া-

সুবাহাকা আল্লাহুম্ম ওয়াবি হামদিকা, তাবারকাসমুকা, ওয়াতাআলা যাদ্দুকা, ওয়ালাইলাহা গায়রুকা

سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা জড়িত পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, তোমার নাম অনেক বরকতমণ্ডিত হোক, তোমার মহানত্ব সমুন্নত হোক। আর তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই।

আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ পড়া

আউযু বিল্লাহ হিমিনাস শাইতানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

অর্থঃ হে আল্লাহ বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে আমি তোমার নিকট মুক্তি চাই । পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।

সুরা ফাতিহা পড়া-

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

বিসমিল্লাহির রাহমা-নির রাহি-ম।

পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।


اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ-লামি-ন।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।


الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ

আররাহমা-নির রাহি-ম।

যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু।


 مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ

মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।

যিনি বিচার দিনের মালিক।


اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ

ইয়্যা-কা নাবুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাইন

আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই।


اِهۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ

ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম

আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।


 صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡهِمۡ ۬ غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ

সিরাতাল্লা যি-না আনআমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালা দ্দল্লি-ন।

তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

আমীন!!

অন্য একটি সুরা মিলানো- (সুরা ইখলাস)


قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ

কুল হুয়াল্লাহু আহাদ

বল, তিনি আল্লাহ, এক অদ্বিতীয়


اَللّٰهُ الصَّمَدُ

আল্লাহুসসামাদ

আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।


 لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ

লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ

তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।


 وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ

ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ

আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।

 

রুকু তে দোয়া-

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম)

অর্থঃ আমি মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বৰ্ণনা করছি ।

 

রুকু থেকে উঠে দোয়া

অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকু অবস্থা থেকে মেরুদণ্ডকে উঠাতেন এই বলতেনঃ سمِعَ اللهُ لِمَن حمِدَه (সামি আল্লাহু লিমান হামিদা) অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তার কথা শুনেন।

এছাড়াও পড়বে- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ (রাব্বান ওয়া লাকাল হামদ, হামদান কাছিরান তৈয়েবান মুবারকান ফিহ) অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সব প্ৰশংসা। অত্যধিক পবিত্র প্রশংসা যার মধ্যে ও উপরে বরকত নিহিত।

সাজদায় দোয়া-

سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) অর্থঃ আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي

উচ্চারনঃ আল্লাহুমাগফিরলি ওয়ার হামনি ওয়াজবুরনি ওয়াহদিনি ওয়াআফিনি ওয়ারযুক্বনি ।

অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, ক্ষতি পূরণ কর, মর্যাদা বৃদ্ধি করা, হিদায়াত দাও, নিরাপত্তা ও জীবিকা দান কর। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)

বৈঠকে দোয়া সমূহঃ

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

উচ্চারনঃ আততাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াছলাওয়াতু ওয়াতৈয়েবাতু আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়ু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস স্বলিহিন, আশহাদু আন লা ইলাহা ইলল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ।

অর্থঃ আল্লাহর জন্যই যাবতীয় তাহিয়াত, ছালাওয়াত ও তইয়াবিত সালাম আপনার প্রতি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত হে আমাদের নাবী! সালাম আমাদের প্রতি ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাহগণের প্রতি। (ছালিহীন বা সৎকর্মশীল বান্দা বললে আসমান ও যমীনের প্রত্যেকটি সৎবান্দা এর আওতাভুক্ত হয়ে যায়) । আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি এই মর্মে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।

দরুদে ইব্রাহিম পড়া- শেষ বেঠকে

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى (إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى) آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى (إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى) آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছললাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ, আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ও তার বংশধরকে ছালাতে ভূষিত কর, যেমনভাবে ইবরাহীম নাবী ও তার বংশধরকে ছালাতে ভূষিত করেছ, নিশ্চয়ই তুমি অতি প্ৰশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধর এর উপর বরকত নাযিল কর যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত নাযির করেছ, নিশ্চয় তুমি অতি প্ৰশংসিত মহিমান্বিত।

দোয়া মাছুরা- 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুবকর (রাযিঃ)-কে এই দুআ বলতে শিখিয়েছিলেন

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ. فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি যালামতু নাফছি যুলমান কাছিরান ওয়া লা ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রহিম ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি, আর কেউ পাপরাশি মোচন করতে পারবে না একমাত্ৰ তুমি ছাড়া। অতএব আমাকে ক্ষমা কর, ক্ষমা তোমার নিকটেই রয়েছে। আর আমাকে রহম কর, নিশ্চয় তুমি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।

দোয়া কুনুত পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সালাম ফিরানোর পূর্বে আরো কিছু পঠিতব্য দোয়াঃ

للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল কবরে ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিইহিদ দাজ্জাল ওয়া আউযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়াল মামাতি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল মাগরাম ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মাসীহুদ দাজ্জালের ফিৎনাহ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। জীবন মরণের ফিৎনাহ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ! মা'ছাম (যার কারণে মানুষ পাপে লিপ্ত হয়) ও মাগরাম অর্থাৎ ঋণ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।


اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابَاً يَسِيرَاً

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবাই ইয়াসির

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! অতি সহজভাবে আমার হিসাব নিও।

ফরজ ছলাত শেষে আমলের দোয়া সমূহঃ

প্রথমে আল্লাহুআকবার বলে তিন বার আসতাগফিরুল্লাহ বলা, এরপর -

·       উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রাকতা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।

অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনিই সালাম (শান্তি), আপনার থেকেই শান্তি, হে মহাসম্মানের অধিকারী ও মর্যাদা প্রদানের অধিকারী, আপনি বরকতময়। (এক বার)

·       সুবাহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ১০ বার করে বলা । এর পর আউযু বিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করা (যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাঁর জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।)

এই আমলের পাশাপাশি আরো কিছু দোয়া যেমনঃ

·       লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া ‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলক, ওয়া লাহুল ‘হামদ, ওয়া হুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদীর।

অর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

·       সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।

অর্থঃ আমি আল্লাহতায়ালার প্রশংসাসমেত পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তার সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়া পরিমাণ, তার আরশের ওজন সমপরিমাণ, তার কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি কলেমা এমন যা জিহবাতে অতি হালকা অথচ মীযানে ভারী আর রাহমানের নিকট খুব পছন্দনীয়; তা হলঃ

·       সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম। (বুখারী)

অর্থঃ আমরা আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ্ অতি পবিত্র।

আল্লাহ আমাদের নামাজকে সুন্দর আর একনিষ্ঠকরে দিন আমিন