বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বিতর নামাজ পড়ার বিস্তারিত নিয়ম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত

বিতর অর্থ বিজোড় যা আদায় করা হয় এশার ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত ও নফল শেষ করে। বিতর ছালাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা । বিতর যেহেতু বিজোড় ছালাত তাই এটি এক রাকাত থেকেই শুরু কেননা যে কোন জোড় এর সাথে এক যোগ করলেই তা বিজোড় হয়ে যায়। এজন্য বিতর নামাজ ১,৩,৫,৭… এভাবে পড়া যায় তবে সর্বোচ্চ ১৩ রাকাত পর্যন্ত হাদিসে পাওয়া যায়। এবং তা প্রথম রাত্রি, মধ্য রাত্রি, ও শেষ রাত্রি সকল সময় পড়া যাবে। [মিশকাত - ১২৬৩]

যদি কেউ বিতর পড়তে ভুলে যায় অথবা বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে স্মরণ হ’লে কিংবা রাতে বা সকালে ঘুম হ’তে জেগে উঠার পরে সুযোগ মত তা আদায় করবে (অর্থাৎ কাযা আদায় করবে)

রাসুল (সা.) কীভাবে বিতরের সালাত আদায় করতেন?

হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয় যে রাসূল সাঃ বিতর ছালাত ১,৩,৫… এভাবে পড়েছেন তবে যারা বলেন ১ রাকাত নয়, তাদের কথার ভিত্তি নেই বরং হাদিসে এসেছে-

আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাকাত বিতর পড়তেন। অতঃপর তিনি বসা অবস্থায় দু রাকআত নফল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তাতে কিরাআতও বসে পড়তেন। তিনি রুকূ করতে ইচ্ছা করলে দাঁড়িয়ে যেতেন, তারপর রুকূ করতেন। [ইবনু মাজাহ - ১১৯৬]

রাসূল সাঃ বলেন, “বিত্‌র হল প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হ্‌ক বা সত্য। সুতরাং যে ৫ রাকআত বিত্‌র পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক, যে ৩ রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক এবং যে এক রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক।” [আবূদাঊদ, সুনান ১৪২২, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১২৬৫নং]

এছাড়াও চার খলীফাসহ অধিকাংশ ছাহাবী, তাবেঈ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এক রাক‘আত বিতরে অভ্যস্ত ছিলেন। অতএব ‘এক রাক‘আত বিতর আদায় করা সঠিক তবে তা ৩ থেকে ১৩ পর্যন্তও পড়া যায় এবং তা হাদিস দ্বারা প্রমানিত। যেমন-

ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হল যে, মুআবিয়া (রাঃ) এশার পরে এক রাকআত বিত্‌র পড়লেন (সেটা কি ঠিক)? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি ঠিকই করেছেন। তিনি তো ফকীহ্‌। তাঁকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দাও, তিনি নবী (সাঃ)-এর সাহাবী।’ (বুখারী, মিশকাত ১২৭৭নং)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম রাকাআতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল ‘আলা” (৮৭ : ১৯) দ্বিতীয় রাকাআতে “কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন” (১০৯ : ৬) এবং তৃতীয় রাকাআতে “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” (১১২ : ৪) পড়তেন। [নাসাঈ ও হাকিম]

কখনো সূরা ইখলাছের সাথে তৃতীয় রাকাআতে “কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক” (১১৩ : ৫) ও “কুল আউযু বিরাব্বিন না-স” (১১৪ : ৬) যোগ করতেন। [তিরমিযী]

১ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

নফল ছলাতের ন্যায় তাকবিরে তাহরিমা বেধে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা মিলিয়ে রুকু করবে, রুকু থেকে উঠে হাত তুলে দোয়া কুনুত পড়বে (তবে দো‘আয়ে কুনূত রুকূর আগে ও পরে দু’ভাবেই পড়া জায়েয আছে) এবং পড়া শেষে সিজদায় যাবে এবং বৈঠক করে সালাম ফিরাবে ।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, বিতরের কুনূত রুকূর পরে হবে, না পূর্বে হবে এবং এই সময় দো‘আ করার জন্য হাত উঠানো যাবে কি-না। তিনি বললেন, বিতরের কুনূত হবে রুকূর পরে এবং এই সময় হাত উঠিয়ে দো‘আ করবে। [তুহফা ২/৫৬৬] ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) বলেন, বিতরের কুনূতের সময় দু’হাতের তালু আসমানের দিকে বুক বরাবর উঁচু থাকবে। ইমাম ত্বাহাবী ও ইমাম কার্খীও এটাকে পছন্দ করেছেন।

৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বিতর ছালাত তিন রাকাত পড়তে প্রথম ২ রাকআত পড়ে সালাম ফিরে দিতে হবে। অতঃপর উঠে পুনরায় নতুন করে আরো এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (ইবনে আবী শাইবা, ইর: ২/১৫০) ইবনে উমারও এইভাবে বিত্‌র পড়তেন। (বুখারী)

অথবা ৩ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্‌হুদে বসতে হবে। তাতে আত্‌-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৪, বায়হাকী ৩/২৮, ৩/৩১) এ ক্ষেত্রে মাগরেবের নামাযের মত মাঝে (২ রাকআত পড়ে) আত্‌-তাহিয়্যাত পড়া যাবে না। যেহেতু আল্লাহর রসূল (সাঃ) বিতরকে মাগরেবের মত পড়তে নিষেধ করেছেন। (ইবনে হিব্বান, সহীহ ২৪২০,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৪, বায়হাকী ৩/৩১, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৬৩৪নং) 

এতদ্ব্যতীত ৩ রাকআত বিত্‌র মাগরেবের মত করে পড়া, (দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৬৩৭নং) নতুন করে তাহ্‌রীমার তকবীর দেওয়ার মত (উল্টা) তকবীর দিয়ে পুনরায় হাত বেঁধে দোয়া কুনূত পড়া ইত্যাদি কিছু সলফ কর্তৃক বর্ণনা করা হলেও তা সহীহ নয়। (ইর: ৪২৭নং, তুহ্‌ফাতুল আহওয়াযী ১/৪৬৪) অতএব তা বিদআত ও পরিত্যাজ্য। সুতরাং তিন রাকআত বিতর একটানা ও এক সালামে পড়াই উত্তম।