ওযূর বদৌলতে
বান্দাহ যেভাবে পুরস্কৃত হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে মুমিনেরা! তোমরা যখন নামাযে দাঁড়াও, তখন (তার পূর্বে)
তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টো কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, অতঃপর মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা
টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা ৫; মায়িদা ৬)। এ হলো ওযূর বিষয়ে কুরআন কারীমের নির্দেশ। আর এ ওযূসম্পন্নকারী
বান্দাকে আল্লাহ তাআলা কী কী প্রতিদান দেবেন তা বর্ণনা করেছেন তাঁর প্রিয় হাবীব রাসূলুল্লাহ
(স)-এর হাদীসে। আর তা হলোঃ
১. ওযুকারীর চেহারা থাকবে উজ্জ্বল, সৌন্দর্যমণ্ডিত
রাসূলে কারীম (স) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে
যে, ওযুর কারণে তখন। তাদের হাত, পা ও মুখমণ্ডল ঝকমকে উজ্জ্বল থাকবে।” (বুখারী: ১৩৬,
মুসলিম: ২৪৬)
২. পূর্বেকার গুনাহ মাফ করা হবে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর মতো (সুন্দর করে) ওযূ করে দু'রাকাআত (তাহিয়্যাতুল ওযূ) নামায
আদায় করবে এর মধ্যে অন্য কোন চিন্তা মনে অনবে না, আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের হয়ে যাওয়া
সকল (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারী: ১৬৪, আধুনিক: ১৬০)
৩. পরবর্তী সীমিত সময়ের গুনাহও ক্ষমা করে দেওয়া হবে
ইবনে শিহাব (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (স)-কে বলতে শুনেছি, “যেকোন ব্যক্তি
সুন্দর করে ওযূ করবে, অতঃপর সালাত আদায় করবে, পরবর্তী সালাত আদায় করা পর্যন্ত এর
মধ্যবর্তী সময়ে (হয়ে যাওয়া) তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।(বুখারী: ১৬০, আধুনিক:
১৫৬)
৪. ওযূর পানির ফোটার সাথে গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে
যায় রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, 'যখন কোন মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওযুর সময় মুখমণ্ডল
ধোয়, তখন তার চোখ দিয়ে তার কৃত পাপরাশি পানির সাথে কিংবা পানির শেষবিন্দুর সাথে বের
হয়ে যায়। আর যখন সে তার দুটি হাত ধৌত করে তখন হাত দ্বারা তার হয়ে যাওয়া গুনাহগুলো
পানির সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে ঝরে যায়। এরপর সে যখন তার পা দু’টি ধৌত করে, তখন
তার দু'পা দিয়ে করে ফেলা গুনাহখাতা পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বেরিয়ে
যায়। এমনকি সে তার যাবতীয় (সগীরা) গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়
। (মুসলিম: ২৪৪)।
৫. নখের নিচ থেকে গুনাহ বের হয়ে যায় নবী করীম (স)
বলেছেন, “যে ব্যক্তি ওযূ করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমস্ত পাপ ঝরে যায়,
এমনকি তার নখের ভেতর থেকেও (সগীরা গুনাহ) বের হয়ে যায়।” (মুসলিম: ২৪৫)
৬. বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,
“আমি কি তোমাদের এমন কাজ সম্পর্কে জানাবো না, যা করলে আল্লাহ তাঁর বান্দার পাপরাশি
দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল । (হে আল্লাহর রাসূল!) অবশ্যই আপনি
তা বলুন। তখন তিনি বললেন, অসুবিধা ও কষ্ট থাকাসত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা, (প্রত্যহ
পাঁচবার) মসজিদে যাওয়া-আসার কারণে পদক্ষেপের পরিমাণ। বেশি হওয়া এবং এক নামায আদায়ের
পর পরবর্তী ওয়াক্তের নামায পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা
(অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যের গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখা)।” (মুসলিম: ২৫১)
৭. ওযুবিধৌত অঙ্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। “মুমিন বান্দার
সৌন্দর্য ঐ পর্যন্ত পৌছবে (শরীরের) যেসব অঙ্গে ওযূর পানি পৌছে।” (মুসলিম অর্থাৎ, ওযূতে
অভ্যস্থ মুমিন বান্দাদের ওযুর অঙ্গগুলো কিয়ামতের দিন সুশোভিত দেখাবে ।
৮. ওযু হলো উম্মত চেনার উপায় একবার সাহাবায়ে কেরাম
জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উম্মতের যেসব লোক এখনো দুনিয়াতে আসেনি (পরবর্তী
যামানায় আসবে) তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, তোমরা বলতো
কালো ঘোড়ার পালের মধ্যে যদি কিছু সাদা কপাল ও সাদা পা ওয়ালা ঘোড়া মিশে যায় তাহলে
এগুলো কি তোমরা চিনে বের করে নিতে পারবে না? উত্তরে সাহাবীগণ বললেন, হ্যা, ইয়া রাসূলুল্লাহ
তা পারব (এটাতো সহজ কাজ)। তখন নবী করীম (স) বললেন, যারা আমার উম্মত হবে তারা তো ওযু
করবে, আর ওযূর পানির ছোঁয়া লাগা অঙ্গগুলো কিয়ামতের দিন সৌন্দর্যের ঝলকানিতে চকমক
ও ঝকঝক করতে থাকবে । (ফলে অতি সহজেই আমি তাদের চিনে বের করে ফেলতে পারব এবং) তাদেরকে
হাউযে কাউসারের পানি পান করানোর জন্য আমি অনেক আগেই সেখানে পৌছে যাব। অতএব, যে লোক
পরকালে তার সৌন্দর্য বর্ধন করতে চায়, সে যেন তখনই তার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে
(অর্থাৎ উত্তমরূপে ওযূ করে)। (মুসলিম) এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, যারা নামায পড়ে না,
তারা ওযূও করে না। ফলে সেদিন তাদের চেহারায় কোন সৌন্দর্য থাকবে না; বরং পাপীদের চেহারা
থাকবে কালো কুৎসিত । কাজেই নবীজির উম্মত হিসেবে দাবি করার কোন প্রমাণ সেদিন তারা দেখাতে
পারবে না । নাউযুবিল্লাহ!
৯. ঈমানের পূর্ণতা লাভ আবূ মালেক আল আশআরী (রা) থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ” (মুসলিম)। অর্থাৎ যারা
ওযূ করে পবিত্র থাকে ঈমানের অর্ধাংশ তাদের এমনিতেই পূর্ণ হয়ে যায়।
১০. গুনাহের কাফফারা উসমান (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(স) বলেছেন, “যখন ফরয সালাতের ওয়াক্ত হয়, আর তখন কোন মুসলিম বান্দা যদি উত্তমরূপে
ওযূ করে এবং তা খুশখুশূ ও বিনয়ের সাথে করে অতঃপর (সালাতের ভিতরে) রুকূ করে তখন তার
এ আমল পূর্ববর্তী সকল (সগীরা) গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যায়, যদি এ বান্দা কোন কবীরা
গুনাহ না করে। আর এ ফযীলত যুগ যুগ ধরে চলমান থাকবে।” (মুসলিম: ২২৮)
১১. ওযূ ঈমানের পরিচায়ক। সাউবান (রা) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “তোমরা (ভালো কাজে) অটল থাক। যদিও (সকল কাজে) তা পরিপূর্ণভাবে
করতে সক্ষম হবে না। তবে জেনে রাখ, নামায হচ্ছে সর্বোত্তম ইবাদত। আর কেবল মুমিন বান্দাই
ওযুকে হিফাযতে রাখে।” (মালেক, আহমাদ, দারেমী, ইবনে মাজাহ) অর্থাৎ, সর্বদা ওযূ অবস্থায়
থাকা ঈমানদারীর লক্ষণ।
১২. ওযূ অবস্থায় থাকলে ফেরেশতারা অনবরত নেকী লিখতে
থাকে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “হে আবু হোরায়রা! যদি তুমি ওযু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’
ও ‘আল হামদুলিল্লাহ্’ বল, তাহলে একজন পর্যবেক্ষক (ফেরেশতা) তোমার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত
নেকী লিখতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার ওযু ভঙ্গ না হয়।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১ম খণ্ড,
পৃ. ২২০)
0 মন্তব্যসমূহ
Don't forget to Comment!