ওযূর ফযীলত

ওযূর ফযীলতঃ

পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ওযূ। এর অনেক ফযীলত রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হল

(ক) ওযূ ঈমানের অর্ধেক

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الإِيْمَانِ ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। [ইমাম নববী, শারহু মুসলিম, ‘ওযূর ফযীলত অনুচ্ছেদ, হা/৫৩৩, ৩/৯৫ পৃঃ]

(খ) ওযূ ছোট পাপের কাফ্ফারা

এ মর্মে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيْئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوْبِ.

কোন মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা ওযূ করার সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত পাপ পানির সাথে অথবা (তিনি বলেছেন,) পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে উভয় হাত ধৌত করে তখন তার দুহাতের স্পর্শের মাধ্যমে অর্জিত পাপ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে উভয় পা ধৌত করে তখন তার দুপা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত পাপ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। এইভাবে সে যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। [ইমাম নববী, শারহু মুসলিম, ‘ওযূর পানির সাথে পাপ সমূহ বের হয়ে যায়, অনুচ্ছেদ, হা/৫৭৬, ৩/১২৬ পৃঃ]

 

অন্য একটি হাদীছে এসেছে, ওছমান (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাস হুমরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ওছমান ইবনু আফ্ফান (রাঃ)-এর জন্য ওযূর পানি নিয়ে আসলে তিনি ওযূ করে বললেন, লোকেরা রাসূল (ছাঃ) থেকে বেশ কিছু হাদীছ বর্ণনা করে থাকে। ঐ হাদীছগুলো কি তা আমার জানা নেই। তবে আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমার এই ওযূর ন্যায় ওযূ করতে দেখেছি। তারপর তিনি বলেছেন, مَنْ تَوَضَّأَ هَكَذَا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَكَانَتْ صَلاَتُهُ وَمَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ نَافِلَةً. ‘যে ব্যক্তি এভাবে ওযূ করে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ফলে তার ছালাত ও মসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত আমল হিসাবে গণ্য হয়। [ইমাম নববী, শারহু মুসলিম হা/৫৪৩, ৩/১০৮ পৃঃ]

 

(গ) ওযূ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে

 

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ. قَالُوْا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ.

আমি কি তোমাদেরকে (এমন কাজ) জানাবো না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গুনাসমূহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায় থেকেও পুর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা, ছালাতের জন্য মসজিদে বার বার যাওয়া এবং এক ছালাতের পর আর এক ছালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর এই কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা। [ইমাম নববী, শারহু মুসলিম হা/৫৮৬, ৩/১৩৪ পৃঃ]

 

(ঘ) ওযূ জান্নাত লাভের মাধ্যম

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাতের সময় বেলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন,

يَا بِلاَلُ حَدِّثْنِيْ بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِيْ الإِسْلاَمِ فَإِنِّيْ سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِيْ الْجَنَّةِ قَالَ مَا عَمِلْتُ عَمَلاً أَرْجَى عِنْدِيْ أَنِّيْ لَمْ أَتَطَهَّرْ طُهُوْرًا فِيْ سَاعَةِ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلاَّ صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُوْرِ مَا كُتِبَ لِيْ أَنْ أُصَلِّيَ.

হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক সন্তোষজনক যে আমল তুমি করেছ, তা আমাকে বল। কেননা জান্নাতে (মি ‘রাজের রাতে) আমি আমার সামনে তোমার পাদুকার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বেলাল (রাঃ) বললেন, আমার নিকট এর চেয়ে (অধিক) সন্তোষজনক কিছু আমি করিনি যে, দিন-রাত যখনই যে কোন প্রহরে আমি পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে তাহারাত দ্বারা ছালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ ছালাত আদায় করা আমার তাক্বদীরে লেখা ছিল। [বুখারী হা/১১৪৯]

 

(ঙ) ওযূ অন্যান্য উম্মাতের সাথে উম্মাতে মুহাম্মাদীর পার্থক্যকারী

একটি হাদীছে এসেছে, ছাহাবীগণ বললেন,

كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلاً لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَىْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلاَ يَعْرِفُ خَيْلَهُ. قَالُوْا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ فَإِنَّهُمْ يَأْتُوْنَ غُرًّا مُحَجَّلِيْنَ مِنَ الْوُضُوْءِ وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ.

অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার উম্মাতের এমন লোকদের কিভাবে চিনবেন যারা এখনও দুনিয়াতেই আসেনি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির নিকট কাল এক রঙ্গা বহু ঘোড়ার মধ্যে একদল ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা বিশিষ্ট ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়া সমূহ চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার উম্মতের লোকেরও ওযূর কারণে (ক্বিয়ামতের দিন) সেইরূপ ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা অবস্থায় উপস্থিত হবে আর আমি হাউযে কাওছারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসাবে উপস্থিত থাকব’। [মুসলিম, হা/২৩৪]

 

(চ) ওযূ শয়তানের গিঁট খোলার অন্যতম মাধ্যম

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيْةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ.

তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদাংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। পরে ওযূ করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর ছালাত আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথা সে সকালে উঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। [বুখারী, হা/১১৪২]