responsibility for parents after death

পিতামাতার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় সমূহ

মানুষ মারা গেলে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি আমল ব্যতীত যথা-

(১) সে নিজে বা তার পক্ষ থেকে সাদাকায়ে জারিয়া।

(২) ইলম যার দ্বারা উপকার সাধিত হয়।

(৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করতে থাকে।


সদকায়ে জারিয়া করা

সদকায়ে জারিয়া হলো এমন সাদাকা বা দান যার কার্যকারিতা কখনো শেষ হবে না এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে অথবা দীর্ঘদীন থাকবে। যেমন কেউ যদি মসজিদ নির্মন করে দেয় তাহলে এই মসজিদের মানুষ যত দিন সলাত আদায় করতে ততদিন তিনি সওয়াব পেতে থাকবেন ।

সদাকায়ে জারিয়ার কিছু উদাহরনঃ

গাছ লাগানো যা থেকে মানুষ উপকৃত হবে ।

নল কুপ বসিয়ে বা কুপ খনন করে মানুষের পানির ব্যাবস্থা করা ।

মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) ছাপানো ও বিতরণ করা ।

ইসলামী বই বিতরন কিংবা লাইব্রেরি করে দেয়া ।

মসজিদ মাদরাসা ইয়াতিম খানা নির্মান ও সহযোগিতা করা । ইত্যাদি

(সদাকায়ে জারিয়ার উদাহরন দিয়ে শেষ করা যাবে না)  

যদি মাইয়্যাত ব্যাক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার নিজের জন্য সাদাকায়ে জারিয়া করে যান তবে তো তিনি তার সওয়াব পাবেনই সেই সাথে যদি তার পক্ষ থেকে তার সন্তান গন বা পরিবারের পক্ষ থেকে যে কেউ সাদাকায়ে জারিয়া করেন তাহলেও তিনি তার সওয়াব পাবেন । আলহামদুলিল্লাহ এটাই সবচেয়ে সহজ উপায় মৃত ব্যাক্তির জন্য কিছু প্রেরণ করার ।

 

বেশী বেশী দুআ করা

পিতা-মাতার জন্য বেশি বেশি দুয়া করা, তাদের জন্য দোয়া কারা নিয়ম আল্লাহ তাআলা আলকুরআনে শিখিয়েছেন,

যেমন সুরা বনি ইসরাইলের ২৪ নং আয়াতে এসেছে-

رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا

উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা’

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন

এছাড়াও মা-বাবার জন্য কুরআনে উল্লেখিত দোয়া সমূহ পড়তে এই লিংকেক্লিক করুন

 

মাইয়্যাতের পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া

দুয়া করার পাশা পাশি পিতমাতার জীবনের সকল গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ।

 

আরো যে সকল কাজ করা যেতে পারে

আরো যে সকল কাজ করার ব্যাপারে কুরআন হাদিসে বর্ণনা এসেছে যেমনঃ

১। মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা

২। মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

৩। ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা

৪। ঋণ পরিশোধ করা

৫। কাফফারা আদায় করা

৬। মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা

৭। মান্নত পূরণ করা

ক. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন

খ. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ

৮। মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা

৯। কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

১০। তাদের কবর যিয়ারত করা – মনে রাখতে হবে কবর যিয়ারতের জন্য কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না, যখন ইচ্ছা হবে তখন এবং একা একা বা কয়েকজন মিলে ।


রেফারেন্স সমূহঃ

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া  ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু’আ করে

[সহিহ মুসলিম ৪৩১০]

 

কবর যিয়ারত করা প্রসঙ্গেঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ

আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়

[সুনান তিরমীযি ১০৫৪]

 

অঙ্গীকার বা ওয়াদা পুরন করা প্রসঙ্গেঃ

কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسۡ‍ُٔولٗا

আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল ৩৪]

 

কবর জিয়ারতের দোয়াঃ

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ

উচ্চারনঃ

অর্থঃ কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ ১৫৪৭]

 

কবর জিয়ারত প্রসঙ্গেঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ

আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়

[সুনান তিরমীযি ১০৫৪]

 

ভালো কাজ জারি রাখা প্রসঙ্গেঃ

«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ »

ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]

مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না [সহীহ মুসলিম ২৩৯৮]

 

মান্নত পুরা করা প্রসঙ্গেঃ

أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَمَاتَتْ فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ صُمْ عَنْهَا

কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]

 

ক্ষমা প্রার্থনা প্রসঙ্গেঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ ؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ

অর্থ: আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো

[আল-আদাবুল মুফরাদ ৩৬]।

মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

عَنْ عُثْمَانَ ، قَالَ : وَقَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرِ رَجُلٍ وَهُوَ يُدْفَنُ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَالَ : اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا اللَّهَ لَهُ بالثَّبَاتِ ؛ فَإِنَّهُ يُسْأَلُ الآنَ

অর্থ: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে

[মুসনাদুল বাজ্জার ৪৪৫]

 

ঋণ পরিশোধ করা প্রসঙ্গেঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهً حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ

‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]

ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে  আরো এসেছে,

مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ

যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]

 

পিতামাতার ভাইদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা প্রসঙ্গেঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ ، فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ

যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২]