অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্রতা অর্জনের উপায়


অপবিত্র বস্তু সমূহ ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের উপায়

নাজাসাত তথা অপবিত্র বস্তু যার দ্বারা অযু কিংবা গোসল অথবা তায়াম্মুম ওয়াজিব হয়ে যায়। নাজাসাত এমন বস্তু হতে পারে যা শরিরে, স্থানে বা কাপড়ে লাগলে তা ময়লা করতে পারে আবার ময়লা নাও করতে পারে । যেমনঃ মানুষের মল যদি কাপড়ে লাগে তাবে তা ময়লা করবে, আর যদি মুত্র লাগে তবে তা বুঝা যাবে না এবং ময়লাও করবে না । কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই তা নাজাসাত বা অপবিত্র বস্তু হিসাবে গণ্য হবে এবং তা থেকে তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। নিচে বেশ কয়েকটি অপবিত্র বস্তু ও শরিয়ার আলোকে তাদের পবিত্র করার উপায় বর্ণনা করা হলো।  


১। মানুষের মল ও মুত্রঃ

  • ছোট ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে যারা শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করে এবং এর বাহিরে অন্য খাবার খায়না তাদের হুকুম হলো, ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে আর মেয়ে শিশুর পেশাবে পানি ঢেলে ধৌত করতে হবে।
  • ছোট ছেলে-মেয়ে যদি মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়া শুরু করে তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই পেশাব পানি ঢেলে ধৌত করে পরিস্কার করতে হবে।
  • জুতায় যদি নাজাসাত (অপবিত্র বস্তু) লেগে যায় তাহলে তা পবিত্র করার পদ্ধতি হচ্ছে মাটিতে ঘষামাজা করা, এভাবে যদি নাজাসাত (অপবিত্র বস্তু) এর চিহ্ন দুর হয়ে যায় তবে জুতা পরিষ্কার হবে অন্যথায় অপবিত্র বলে গণ্য হবে।
  • মেয়েদের কাপড়ের যে অংশ অতিরিক্ত, যা চলা ফেরা করার সময় মাটিতে লেগে থাকে, অর্থাৎ বোরখার নিচের অংশ কিংবা চাদরের নিচের অংশ কিংবা ওরনা বা আঁচল যাই হোক না কেন তা যদি অপবিত্র মাটিতে নাজাসাত (অপবিত্র বস্তু) এর সাথে স্পর্শ লেগে অপবিত্র হয়ে থাকে তবে তা পবিত্র করার উপায় হলো অপবিত্র মাটি থেকে পবিত্র মাটিতে স্পর্শ করলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। অর্থাৎ অপবিত্র মাটি থেকে যদি আবার পবিত্র মাটিতে যায় তবে তাতেই পবিত্র হয়ে যাবে।
  • জমিনের কোন স্থানে যদি মানুষের মল অথবা মুত্র পতিত হয় তবে সে স্থান অপবিত্র হয়ে যায়, মল থেকে সে স্থান পবিত্র করতে প্রথমে সেটাকে দুর করতে হবে যেন মলের চিহ্ন দুর হয়ে যায় অতঃপর সে স্থানে একটু পানি ঢেলে দিতে হবে বা ভেজা কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে পরিস্কার করলে তা পবিত্র হয়ে যাবে ।
  • আর মুত্র থেকে স্থান পবিত্র করতে হলে সে স্থানের মাটি সরাতে হবে না বরং সেখানে প্রচুর পরিমাণে পানি ঢালতে হবে যতক্ষণ না পেশাবের চিহ্ন ও গন্ধ চলে যায়।
  • মল মুত্রের চিহ্ন পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায় এবং ঢিলা কুলুপ দিয়েও পরিষ্কার করা যায় এমনকি টয়লেট টিসু পেপার দিয়েও করা যায় ।

২। হায়েযের রক্তঃ

হায়েযের রক্ত অপবিত্র। সাধারণত হয়েযের রক্ত লাল বর্ণের হয়ে থাকে তবে ভিন্ন বর্ণেরও হতে পারে সেক্ষেত্রেও তা হায়েয হিসাবে গন্য হবে। এর থেকে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি হলো কাপড়ের যে স্থানে হয়েজ লেগে থাকবে সে স্থান প্রথমে ঘষামাজা করা এরপর পানি দিয়ে ধৌত করা।

৩। কুকুরের লেহনকৃত পাত্রঃ

কুকুর যদি কোন পাত্রে মুখ দেয় তবে সে পাত্র অপবিত্র হয়ে যায় এবং সে পাত্রে কোন খাবার থাকলে সেটিও অপবিত্র হয়ে যায়। এক্ষেত্রে পবিত্র করার পদ্ধতি হলো সাত বার সেটি ধৌত করা। তবে প্রথম বার মাটি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা।

৪। প্রবাহিত রক্ত, শুকরের গোশত ও মৃত প্রাণীঃ

প্রবাহিত রক্ত, শুকরের গোশত ও মৃত প্রাণী হলো অপবিত্র তবে মৃত প্রাণী অপবিত্র হলেও যেসকল প্রাণী যবেহ করে খাওয়া হালাল যেমন উঠ, গরু, ছাগল ইত্যাদি এগুলোর চামড়া লবণ মেখে রোদে শুকানোর মাধ্যমে পবিত্র করা যায়।

সকল মৃত ও রক্ত অপবিত্র হলেও দুই প্রকার মৃত ও রক্ত হালাল তাহলো মৃত মাছ ও টিড্ডি এবং কলিজা ও প্লীহা ।

৫। আল-ওয়াদীঃ

পেশাবের পর ঘোলাটে ও সাদা বর্ণের যে গাঢ় পানি বের হয় তা হলো আল ওয়াদী। এটা এ প্রকার রোগ আর এটিও নাজাসাত হিসাবে গণ্য হবে এবং যার কারনে অযূ নষ্ট হবে। এর থেকে পবিত্রতা অর্জনের উপায় হলো পরুষাঙ্গ ধোত করা ও অযু করা। যদি ওয়াদী শরীর বা কাপড়ের কোন অংশে লাগে তাহলে সে অংশ ধৌত করা।

৬। আল-মাযীঃ

বীর্যরস হলো আল-মাযী। যৌন চিন্তার ফলে বা সহবাসের প্রস্তুতি গ্রহণকালে সাদা বর্ণের আঠালো যে তরল বের হয় তা হলো আল-মাযী। এটিও নাজাসাত হিসাবে গণ্য হবে এবং এর থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষদ্বয় ধৌত করে সালাতের ন্যায় অযূ করতে হবে। যদি মাযী শরীরের বা কাপড়ের কোন অংশে লাগে তাহলে সে অংশ ধৌত করতে হবে বা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।

৭। আল-মানিঃ

বীর্য হলো আল-মানি । সহবাসের মাধ্যমে কিংবা অন্য যেকোন উপায়ে যৌন উত্তেজনার চূড়ান্ত মুহূর্তে অথবা স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বীর্য বের হয়ে গেলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায় । ফরজ গোসলের নিয়ম দেখুন এখানে।

তবে অনেক আলেমের মতে বীর্য অপবিত্র নয় আবার অনেকের মতে অপবিত্র। যেসব আলেম বীর্যকে পবিত্র মনে করেন তাদের মতে কাপড়ে বীর্য লাগলে সে কাপড় পড়ে সালাত আদায় করা যাবে তবে কাপড় ধৌত করে নেয়াই উত্তম।

আর যেসব আলেম বীর্যকে পবিত্র মনে করেন না তাদের মতে কাপড়ে বীর্য লাগলে সে কাপড় পড়ে সালাত আদায় করা যাবে না এবং সে কাপড় আগে ধৌত করে নেয়া জরুরী।

কাপড়ে বীর্য লাগলে তা পবিত্র করার তিনটি পদ্ধতি হাদিস থেকে জানা যায় তা হলো ১। বীর্য দেখা লেগে সে স্থান ধৌত করা, ২। আর দেখা না গেলে বা বুঝা না গেলে শুধু পানি ছিটিয়ে দেয়া ৩। আর যদি বীর্য শুকিয়ে যায় তবে নখ দিয়ে আঁচড়ে তুলে ফেলা। এই তিন ভাবে বীর্য থেকে কাপড় পবিত্র করা যায়।

৮। আল-জাল্লালাহঃ

জাল্লালাহ হলো ঐ সকল প্রাণী যারা নাজাসাত বা অপবিত্র বস্তু খায় যেমনঃ মল মুত্র ইত্যাদি। এসব প্রাণী পবিত্র করার উপায় হলো তাদের কয়েকদিন আটকে রাখা যেন তারা আর কোন নাজাসাত খেতে না পারে। কোন হালাল প্রাণী নাজাসাত খেলে তার তাৎক্ষণিকভাবে যবেহ করে খাওয়া হালাল নয়। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু জাল্লালাহ খায় এমন প্রাণী যবেহের পূর্বে তিন দিন আটকে রাখতেন এবং তার পর যবেহ করতেন ও ভক্ষন করতেন।

৯। ইঁদুরঃ

ইঁদুর অপবিত্র। কোন খাদ্য কিংবা পানীযতে ইঁদুর পতিত হলে সে খাদ্য ও পানীয় অপবিত্র হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পবিত্র করার পদ্ধতি হলো কঠিন পদার্থে ইঁদুর পতিত হলে ইঁদুরটিকে ও এর আশেপাশের বে কিছু অংশ ফেলে দিতে হবে তাহলে বাকি অংশ পবিত্র বলে গন্য হবে।

১০। হারাম প্রাণীর মল ও মুত্রঃ

যেসব প্রাণী খাওয়া হারাম তাদের মল ও মুত্র অপবিত্র।

·       রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাড় অথবা গোবর ঢিলা হিসাবে ব্যবহার করতে নিষধ করেছেন।

তবে যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল তাদের মল ও মুত্র অপবিত্র নয় এবং এসব প্রাণীর মুত্র শরীর কিংবা কাপড়ে লাগলে তা ধোত করা জরুরী নয় । যেমনঃ

·       মদীনায় একদল সাহাবী অসুস্থ হলে নবী সাঃ তাদেরকে উটের পেশাব পান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এ থেকে বুঝা যায় উটের পেশাব অপবিত্র নয়।

·       মসজিদ নির্মাণের পূর্বে রাসূল সাঃ ছাগলের খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় হালাল প্রাণী মল মুত্র অপবিত্র নয়।

১১। মদঃ

অধিকাংশ আলেমের মতে মদ অপবিত্র। তবে কোন কোন আলেমের মতে মদ অপবিত্র নয় তাদের মতে মদ নিজে নাপাক নয় তবে মদ খাওয়া হলো নাপক বা নিকৃষ্ট কাজ।