ওযুর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الإِيْمَانِ ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক আর পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ওযূ। সলাত আদায় করার জন্য উযু করে নেয়া ফরজ, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “পবিত্রতা অর্জন ছাড়া নামায কবুল হয় না।” (মুসলিম ২২৪) সুতরাং সঠিক ভাবে ওযু করার গুরুত্ব অপরিসীম । এই পোস্টে আমরা ওযু সম্পর্কিত প্রায় সকল বিষয় আলোচনা করার চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ ।

الوُضوء – ওযু এর আভিধানিক অর্থঃ الوُضوء শব্দটি الوضاءة মাছদার হতে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ হলো, উত্তমতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।

الوُضوء - ওযু এর পারিভাষিক অর্থঃ ইবাদতের উদ্দেশ্যে শরীআতের নির্দিষ্ট নিয়মে ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহে পানি ব্যবহার করার নাম ওযূ।

الوُضوء - ওযু এরহুকুমঃ মুসলিম, প্রাপ্ত বয়স্ক এবং জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ যদি ছালাত আদায়ের ইচ্ছা করে অথবা কাবা শরীফ তাওয়াফ করার ইচ্ছা করে তাহ’লে তার উপর ওযূ করা ওয়াজিব।

ওযূ ভঙ্গ হয়েছে এমন ব্যক্তি ছালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তার উপর ওযূ করা ওয়াজিব। [মুসলিম, হা/২২৫, বুখারী, ‘পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল হবে না অনুচ্ছেদ, হা/১৩৫]

১.১ ওযুর ফরজ সমূহঃ

ওযুর ফরজ চারটি যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আল কুরআন মাজিদে বর্ণনা করেছেন । [Ref-01]
১. মুখমণ্ডল ধৌত করা, (পানি নিয়ে নাক ঝাড়া ও কুলি করা এর অন্তর্ভূক্ত)
[Ref-02]
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা, [সুরা মায়েদা ৬, বায়হাক্বী, হা/২৫৬, দারাকুতনী, হা/২৬৮]
৩. সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা, (উভয় কান এর অন্তর্ভূক্ত) [মায়েদা ৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, তাহক্বীক্ব নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৪৪৩, ছহীহ আবূদাঊদ, হা/১২৩, সিলসিলা ছহীহা হা/৩৬, ইরওয়াউল গালীল, হা/৮৪।]
৪. গোড়ালী পর্যন্ত দুই পা ধৌত করা।

উপরিউল্লেখিত ওযূর চারটি ফরয ছাড়াও আরো দু’টি কাজ অপরিহার্য। এমনকি ফিকহবীদগণের অনেকেই এ দুটিকেও ফরযের মধ্যে গণ্য করেছেন।

৫. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ ওযূর অঙ্গ ধৌত করার সময় ক্রমধারা ভঙ্গ না করা। [মায়েদা ৬]                 ৬. এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করা। [সুনানু আবী দাঊদ, তাহক্বীক্ব নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/১৭৫, হাদীছ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল, ১/১২৭।]

১.২ ওযুর সুন্নাত সমূহঃ

ফরয ব্যতীত ওযূতে বাকি অন্যান্য যত কাজ দলীল দ্বারা প্রমাণিত, সেগুলোই হলো সুন্নাত। সেগুলো হলোঃ

১. মিসওয়াক করা। (বুখারী: ১৫৯)
২. বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা। (আবু দাউদ: ১০১)
৩. দুই হাত কজি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করা। (বুখারী: ১৬৪)
৪. কুলি করা, কুলির সময় ভালো করে গড়গড়া করা । (আবু দাউদ: ১৪২)
৫. নাকে পানি দেওয়া, নাকে পানি টান দিয়ে ঝাড়া দেওয়া। (আবু দাউদ: ১৪২)
৬. ঘন দাড়ি খিলাল করা। (আবু দাউদ: ১৪৫)
৭. ওযূর অঙ্গগুলো ভালো করে ঘষামাজা করা। (ইবনে হিব্বান: ৩৬৩)
৮. ডান অঙ্গ আগে ধৌত করা। (বুখারী: ১৬৮)
৯. ওযূর অঙ্গগুলো তিন বার করে ধৌত করা। (বুখারী: ১৫৮, ১৫৯) (তবে কমপক্ষে ১ বার বোয়া ফরয, বুখারী: ১৫৭), আর তিন বারের বেশি বোয়া মাকরূহ)
১০. ওযূর পর দু'আ করা। (মুসলিম: ২৩৫)
১১. ওযূ শেষে দু'রাকাআত (তাহিয়্যাতুল ওযু) নামায পড়া । (মুসলিম: ২৩৪)

যেসব কাজের পূর্বে ওযু করা ফরযঃ

যেসব কাজের পূর্বে ওযূ করা ফরয, তা হলো

১. সালাত আদায়ের পূর্বে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“হে মুমিনেরা! তোমরা যখন নামাযে দাঁড়াও, তখন (তার পূর্বে) তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টো কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, অতঃপর মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা ৫; মায়িদা ৬)
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “পবিত্রতা অর্জন ছাড়া নামায কবুল হয় না।” (মুসলিম ২২৪) অর্থাৎ, বড় নাপাকি হলে গোসল এবং ছোট নাপাকি হলে অবশ্যই ওযূ করে সালাত আদায় করতে হবে ।

২. কাবাঘরে তাওয়াফ রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “কাবাঘরে তাওয়াফ করা নামাযতুল্য।” (নাসাঈ: ২৯২০ অপর এক হাদীসে আয়েশা (রা)-কে সম্বােধন করে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “পবিত্র না হয়ে আল্লাহর ঘরে তাওয়াফ করো না।” (বুখারী: ৩০৫)

৩. কুরআন শরীফ স্পর্শ করা ইবনে ওমর (রা) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (স) বলেন, “পবিত্র না হয়ে কেউ যেন কুরআন শরীফ স্পর্শ না করে।” (দারা কুতনী: ৪৩১-৪৩৩)

যেসব কাজের জন্য ওযু করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব

প্রথমত: যেসব কাজের পূর্বে ওযূ করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব

১. যিকর ও দুআ করা। (বুখারী: ৪৩২৩) ।
২. মুখস্থ কুরআন তিলাওয়াত করার ক্ষেত্রে।
৩. তিলাওয়াতে সিজদা ও শোকরানা সিজদার পূর্বে (আবার কোন কোন ফকীহর মতে, এ সময় ওযু করা ফরয) ।
৪. ওযূ থাকার পরও পরবর্তী নামায আদায়ে পূর্বে । (আহমাদ- ২/৪০০)
৫. নিদ্রায় যাওয়ার পূর্বে ।
৬. গোসল ফরয হয়ে গেছে এমন ব্যক্তির খাবার গ্রহণ করার পূর্বে ।
৭. একাধিক বার স্ত্রীসহবাস করতে চাইলে পরবর্তী সহবাসের পূর্বে ।
৮. যার উপর গোসল ফরয তার নিদ্রায় যাওয়ার পূর্বে । (বুখারী: ২৮৬, ২৮৭, মুসলিম: ৩০৬)

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আযীয বিন বায (র) বলেছেন, যার উপর গোসল ফরয এমন ব্যক্তি যদি ঘুমাতে যায় তাহলে তার জন্য ৩টি অবস্থা রয়েছে:

ক. যদি বিনা ওযু বা বিনা গোসলে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে তা হবে মাকরূহ ।
খ. যদি ইস্তিনজা করে শুধু ওযূ করে ঘুমায় তাহলে তা চলে ।
গ. আর যদি এ লোক ওযূ ও ফরয গোসল করে ঘুমায় তাহলে সে যেন তার দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে আদায় করল।