আযানের বিশুদ্ধ জবাব ও দোয়া বাংলা উচ্চারন সহ
আলহামদুলিল্লাহ, যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের উপর রহমত
করেছেন বিধায় আমাদের দিয়েছেন অসংখ্যা নেকি অর্জনের মাধ্যম। আজকের আলোচ্য বিষয় হলো আযানের
জবাব ও দোয়া । আযান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ফযীলতের একটি ইবাদত। সকল মুসলিমের
উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে সুযোগ পেলে সালাতের জন্য আযান দেওয়া।
যদিও আমরা অধিকাংশ মানুষই আযান দিতে পারি না, বরং শ্রবণ করি। তাই আমরাও যেন আযানকে
কেন্দ্র করে অগণিত পুরস্কার, রহমত ও বরকত অর্জন করতে পারি সে সুযোগ প্রদান করছেন মহান
রাব্বুল আলামীন। তাই আমরা আযানের জবাব ও দোয়া ভালো ভাবে জেনে বুঝে, মুখস্ত করে এর আমল
করবো ইংশাআল্লাহ।
প্রথমতঃ
১। মুয়াযযিনের সাথে সাথে তার কথাগুলি বলা-
অর্থাৎ মুয়াযযিন আযানে যা বলবে তা আমরাও রিপিট করবো বা হুবহু বলবো, একে
আমরা আযানের জবাব দেওয়া বলি। মুয়াযযিন আযানের মধ্যে যা যা বলবেন মুমিন শ্রোতাও তাই
বলবে। এ বিষয়ে হাদীসে কয়েকটি সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
إِذَا سَمِعْتُمْ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا
يَقُولُ الْمُؤَذِّن
অর্থঃ “যখন তোমরা মুয়াযযিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন মুয়াযযিন যেরূপ বলে তদ্রূপ
বলবে।” [ সহীহ বুখারী ১/২২১, নং ৫৮৬, সহীহ মুসলিম ১/২৮৮, নং ৩৮৩।]
তবে এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম রয়েছে যেমনঃ
মুয়াযযিন যা বলে শ্রোতাও তা বলবে, তবে মুয়াযযিন তাশাহহুদ তথা আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ দ্বিতীয় বার উচ্চারণ করার পরই শ্রোতারা আর জবাব হিসাবে নিম্নক্ত এই যিকিরটি বলবে। [ইবন খুযাইমা, ১/২২০।]
وَأَنَا أَشْهَدُ
أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ
وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبَّاً، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً، وَبِالْإِسْلاَمِ
دِينَاً
উচ্চারনঃ ওয়া আনা আশ্হাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু, রাদীতু বিল্লা-হি
রব্বান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলান, ওয়া বিলইসলা-মি দ্বীনান।
অর্থঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব্ব, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রাসূল এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট।” [ মুসলিম ১/২৯০, নং ৩৮৬।]
এবং মুয়াযযিন যখন ‘হাইয়্যা ‘আলাস্সালাহ’ এবং ‘হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ’ বলবে তখন আযানের জবাব হিসাবে শ্রোতা বলবে,
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
উচ্চারনঃ “লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”
অর্থঃ “আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।” [বুখারী, ১/১৫২, নং ৬১১, ৬১৩; মুসলিম, ১/২৮৮, নং ৩৮৩]
২। দরুদ পাঠ
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা
সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আলা
ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে
স্মরণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইবরাহীমকে
ও তাঁর পরিবার-পরিজনদেরকে। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ!
আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল
করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও
মহামহিমান্বিত”।
৩। আযানের দোয়া পাঠ
মুয়াযযিনের আযান শেষে শ্রোতারা আযানের দোয়া হিসাবে নিম্নক্ত দরুদটি পড়বে-
اللَّهُمَّ رَبَّ
هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيلَةَ
وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحمُوداً الَّذِي وَعَدْتَهُ،
উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্
তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-’ইমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা ওয়াব্‘আছহু
মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ ।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত
সালাতের রব্ব! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা তথা জান্নাতের
একটি স্তর এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে
মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।” [বুখারী ১/২৫২]
পরিশেষে, আযান ও ইকামতে মধ্যবর্তী সময় হলো দোয়া কবুলের সময় তাই ইংশাআল্লাহ
আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে প্রত্যেকে নিজের জন্য দো‘আ করবো। কেননা ঐ সময়ের দো‘আ
প্রত্যাখ্যান করা হয় না।” [ তিরমিযী, নং ৩৫৯৪; আবূ দাউদ, নং ৫২৫] আল্লাহ আমাদের আমল
করার তৌফিক দান করুন আমিন।
লিংকে ক্লিক করার পর ডাউনলোড শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন । ডাউনলোড করতে সমস্যা হলে আমাদের কমেন্ট করে জানান{alertInfo}
0 মন্তব্যসমূহ
Don't forget to Comment!